
ড. মুহম্মদ শহীদ-উজ-জামান বাংলাদেশের অন্যতম সুপ্রতিষ্ঠিত বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান ‘ইকো-সোশ্যাল ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও)’ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা পালনসহ বিগত প্রায় ৩৮ বছর সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ইএসডিও ১৯৯১ সালে পিকেএসএফ-এর সহযোগী সংস্থা হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। সংস্থাটি বর্তমানে ৫০৬টি শাখা অফিসের মাধ্যমে ৫৩টি জেলায় নানাবিধ উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। সংস্থাটির বিভিন্ন কার্যক্রমের আওতায় সংগঠিত পরিবার সংখ্যা প্রায় ৩৫ লক্ষ।
ড. জামান-এর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ইএসডিও উত্তরাঞ্চলের মঙ্গা নিরসনসহ বহুমুখী উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতীয়-পর্যায়ে একটি অনন্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। পরিবেশ সুরক্ষা, শিশুশ্রম নিরসনসহ দরিদ্র মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে ইএসডিও-এর অবদান এবং ড. মুহম্মদ শহীদ-উজ-জামান-এর নেতৃত্বের ভূমিকা তরুণ উন্নয়ন কর্মীদের জন্য ভীষণ অনুপ্রেরণামূলক। পিকেএসএফ পরিক্রমার জন্য ড. মুহম্মদ শহীদ-উজ-জামান-এর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন মোহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন শেখ, সহকারী মহাব্যবস্থাপক, পিকেএসএফ।
পিকেএসএফ পরিক্রমা: ইকো-সোশ্যাল ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও) বর্তমানে সুপ্রতিষ্ঠিত একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা। আপনি প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই ইএসডিও’র সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। ইএসডিও প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট এবং আপনার অনুপ্রেরণা কি ছিল?
ড. মুহম্মদ শহীদ-উজ-জামান: ইএসডিও’র আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু ১৯৮৮ সালে। কিন্তু এটা শুরুর প্রেক্ষাপট অনেক আগে থেকেই। স্কুলে পড়াকালীন আমি কিছু ক্লাবের সাথে যুক্ত ছিলাম, যার মধ্যে একটি ছিল ‘হ য ব র ল ইন্সটিটিউট’। এটি ছিল ছাত্রদের তৈরি করা একটা ক্লাব ছিল । আমি ১৯৮৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার দুই বছর পর ১৯৮৮ সালে সারা দেশেই খুব বড় ধরনের একটি বন্যা হয়। সাধারণভাবে ঠাকুরগাঁও বন্যাপ্রবণ এলাকা না হলেও ৮৮’র বন্যায় ঠাকুরগাওঁ-এর প্রায় সকল এলাকাই প্লাবিত হয়। ঠাকুরগাঁয়ের মানুষ দীর্ঘ প্রায় পঞ্চাশ বছর পরে এক প্রবল বন্যায় বিপর্যদুস্ত হয়ে পড়ে। ঢাকা শহরও বন্যা প্লাবিত হয়ে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেল। আমি ফিরে এসে দেখি বন্যা মোকাবিলায় অনভ্যস্ততার কারণে ঠাকুরগাঁওয়ের সাধারণ মানুষ মারাত্মক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে গেছে। বণ্যা প্রবণ এলাকা না হওয়ায় স্থানীয় বন্যার্তদের দিকে সরকারের মনোযোগও খুব একটা নেই। আমরা হ য ব র ল ইন্সটিটিউটের ১৪ থেকে ১৬ জন কর্মী বন্যার্তদের সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসি। আমরা ২৫০-৩০০ ভাসমান পরিবারকে উদ্ধার করে উঁচু রাস্তায় তাদের থাকার ব্যবস্থা করি। বন্যার পানি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় কিছুদিন পরে সেই রাস্তায় পরিবারগুলোকে রাখাও নিরাপদ মনে হলো না। আমরা ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজকে এক ধরনের শেল্টার হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করি। শুরুতে অধ্যক্ষ মহোদয় সরকারি অনুমোদনের বাইরে এভাবে মানুষকে আশ্রয় প্রদানে অপারগতা জানায়। কিন্তু ওনার ব্যক্তিগত মনোভাব ছিল ইতিবাচক। তিনি আমাদেরকে ইঙ্গিত দিয়ে বলেন যে, অফিশিয়ালি অনুমোদন দিতে না পারলেও বন্যাক্রান্ত মানুষ যদি নিজে থেকে উঠে যায় তাহলে তো আমি বাঁধা দিতে পারবো না। আমরা সাথে সাথে পরিবারগুলোকে কলেজ ভবনে তুলে দেই এবং নিজেদের টাকা-পয়সা যা ছিল তাই দিয়ে তাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেই। বন্যা চলাকালীনই কিছু আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ঠাকুরগাঁয়ের বন্যাক্রান্ত মানুষের জন্য ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কাজ শুরু করে। স্থানীয় উদ্যোমী তরুণদের সংগঠন হিসেবে তারা হ য ব র ল ইন্সটিটিউটের সাথে কাজ করার আগ্রহ দেখায়। আমরাও বেশ উৎসাহ অনুভব করি। পরবর্তীকালে ১৯৮৮ সালের নভেম্বর মাসে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে যখন আমরা রেজিস্ট্রেশন গ্রহণ করি তখন এর নাম হয়, ইকো-সোশ্যাল ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও)।
পিকেএসএফ পরিক্রমা: আপনি সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার বিষয়ে অনার্সসহ মাস্টার্স করেছেন। পরে দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের মঙ্গা বিষয়ের পিএইচডি করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হওয়ার দুই বছরের মধ্যেই সমাজ উন্নয়নে ‘ইএসডিও’ প্রতিষ্ঠা করলেন। অধ্যয়নের বিষয়বস্তুই কি আপনাকে সামাজিক প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে অনুপ্রেরণা দিয়েছে, নাকি সমাজ উন্নয়নের অভিপ্রায় থেকেই আপনি শিক্ষা জীবনে সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার বিষয়ে ডিগ্রি নিয়েছেন?
ড. মুহম্মদ শহীদ-উজ-জামান: ধন্যবাদ। আমি স্কুল পড়েছি ঠাকুরগাঁও গভর্নমেন্ট বয়েজ স্কুলে। আমি মাধ্যমিকে রাজশাহী বোর্ডে মানবিক বিভাগে ১২তম স্থান অর্জন করি। ঢাকা কলেজ থেকে এইসএসসি পাশ করে ভর্তি পরীক্ষায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম স্থান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধা তালিকায় ১২তম স্থান ছিল আমার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেকোনো বিষয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ ছিল আমার। সোশ্যাল সায়েন্স অনুষদের ডিন ড. আনোয়ারুল হক চৌধুরী স্যার আমাকে বললেন, তুমি কেন সোশ্যাল ওয়েলফেয়ারে যেতে চাচ্ছ? তুমি অন্য ভালো সাবজেক্টে ভর্তি হও। তখন একজন শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষক আমাকে গাইড করতেন। তিনি দেশের প্রখ্যাত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব জনাব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি আমার সরাসরি শিক্ষক ছিলেন। স্যার যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র ছিলেন তাই আমাকেও অর্থনীতি বিষয়ে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই সমাজের অবহেলিত মানুষের জন্য সাথে সরাসরি কাজ করার আগ্রহ ছিল আমার। সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে ভর্তি হওয়ার চিন্তাই আমার আসেনি।
পিকেএসএফ পরিক্রমা: ইএসডিও’র প্রতিষ্ঠাকালে আপনার আশে-পাশে বা সামনে-পেছনে এমন কেউ কি ছিল যার কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করতে চান?
ড. মুহম্মদ শহীদ-উজ-জামান: শুধু ইএসডিও প্রতিষ্ঠা নয়, এখন পর্যন্ত আমার যা কিছু সাফল্য তার পেছনে আমার বাবার অবদান সবচেয়ে বেশি। তিনি ছিলেন একজন সরকারি চাকরিজীবী। আমার ভাইয়েরাও সরকারের পদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। আমার পুরো পরিবার ছিল সরকারি চাকরিজীবী পরিবার। কিন্তু আমি স্কুল জীবন থেকে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত। তারপরও আমার বাবা আমার প্রায় সব কর্মকাণ্ডে সমর্থন দিয়েছেন। আমি এসব করে সময় নষ্ট করছি, এ ধরনের প্রশ্ন অনেকেই আমার বাবাকে করতেন। বাবার জবাব হতো, আমার ছেলে কি কোন খারাপ কাজ করছে? আমার ওপর বাবার খুব সুউচ্চ আস্থা ছিল। সম্ভবত বাবার আস্থাই আমার শক্তি এবং সাহস হিসেবে কাজ করেছে। আমার বাবা একজন ভালো নাট্য পরিচালকও ছিলেন। পরিবারের বাইরে আলমগীর স্যারের অবদান অনেক বেশী। শিক্ষক হিসেবে শুধু লেখাপড়ার বিষয়ে নয়, আরো উনি নানা ভাবে তিনি আমাকে সাহায্য করেছেন। আমি সপ্তম শেণিতে অধ্যয়ণকাল থেকেই তার সাথে যুক্ত ছিলাম। তিনি আমাকে আবৃত্তি শিখিয়েছেন। সাংস্কৃতিক নানা বিষয়ে আমি তার কাছে শিখেছি। আমরা যখন ইএসডিও শুরু করি তখন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অনেক দিন ইএসডিও’র চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আমার প্রায় সকল কাজে আমার স্ত্রীও পাশে থেকে আমাকে উৎসাহ প্রদান করেছেন। সর্বোপরি, ঠাকুরগাঁও-এর স্থানীয় সাধারণ মানুষ, যারা আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছেন তাদের সকলের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।
পিকেএসএফ পরিক্রমা: আপনি তো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেক ভালো ফলাফল নিয়ে লেখাপড়া শেষ করেছেন। আপনি শিক্ষকতা বা সরকারি চাকরি অথবা অন্য কোনো পেশায় যেতে পারতেন। সেটা না করে গ্রামের মানুষের জন্য, দরিদ্র মানুষের জন্য কাজ করারটাই নিজের পেশা হিসেবে বেছে নিলেন কেন? অনুপ্রেরণাটা কী ছিল?
ড. মুহম্মদ শহীদ-উজ-জামান: আমার জন্ম ঠাকুরগাঁয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায়। ঐ এলাকার পাশে মাহমুদ পাড়া নামে একটা পাড়া ছিল। সেখানকার বেশিরভাগ মানুষ ছিল খুবই হতদরিদ্র। শৈশবে আমি গ্রামের ছেলেদের সাথে খেলার সময় মনে হতো, বাড়িতে ফিরে গিয়ে আমি তো অনেক কিছুই খেতে পারবো; কিন্তু যাদের সাথে খেলছি তারা তো বাড়িতে গিয়ে আমার মতো খেতে পারবে না। শৈশবের খেলার সাথীদের এই দারিদ্র্য আমাকে কষ্ট দিতো। পরবর্তীতে আমার যখন বসবাসের জন্য ঠাকুরগাঁও জেলা শহরে চলে আসি তখনো বাড়ির পাশের অধিকাংশ মানুষ ছিল দরিদ্র। এখানে আদিবাসী সাঁওতাল এবং ওরাও জাতিগোষ্ঠীর বসবাস ছিল। সে সময় থেকেই আমার মধ্যে এক বোধ কাজ করতো, যদি কখনো সুযোগ হয় আমার আশেপাশের লোকজনের জন্য কিছু করব। এটাই আমার জীবনে একটা প্রতিজ্ঞা বা আকাঙ্ক্ষা বা প্রত্যাশা ছিল।
পিকেএসএফ পরিক্রমা: আপনি মানুষের দারিদ্র্য বা কষ্ট প্রত্যক্ষ করে ‘হ য ব র ল’ থেকে ইএসডিও প্রতিষ্ঠা করেছেন?
ড. মুহম্মদ শহীদ-উজ-জামান: জি। এমনকি ‘হ য ব র ল’-এর সময় থেকেই আমরা মানুষকে একইভাবে সাহায্য করার চেষ্টা করতাম। আমাদের ফ্রি কোচিং সেন্টার ছিল। যে-সকল বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারত না, তাদেরকে স্কুলে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হতো। দরিদ্র শিশুদের আমরা পড়াতাম। এগুলো আমরা করতাম ইএসডিও প্রতিষ্ঠা হওয়ার আগেই। তারপর আমরা শিশু শ্রম বন্ধ করার জন্য মানুষকে সচেতন করতাম। ১৯৮৬ সালে আমরা ‘হ য ব র ল’-এর উদ্যোগে একটা সম্মেলনের আয়োজন করেছিলাম। সে সম্মেলনে প্রধান অতিথি করলাম এক বাদাম বিক্রেতাকে। এটা ছিল একটি সিম্বলিক বিষয়; যার মাধ্যমে মানুষের প্রতি সম্মান প্রদানের বিষয়টিকে আমরা সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছিলাম। সাধারণ মানুষকে সম্মান প্রদানের বিষয়টিকে আমরা হৃদয়ে অনুভব অনুভব করতাম। আমাদের বিশ্বাস ছিল, দরিদ্র মানুষকে সম্মান না করে শুধু দান-দক্ষিণা করে কোনো পরিবর্তন আনা যাবে না। আমরা এটা অনুভব করতাম বলেই আমরা আজকে পরিবর্তনটা করতে পারছি।
পিকেএসএফ পরিক্রমা: ইএসডিও’র প্রধান লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যগুলো কী কী?
ড. মুহম্মদ শহীদ-উজ-জামান: ইএসডিও’র লক্ষ্য বলার আগে একটা কথা বলি যে, যখন ইএসডিও প্রতিষ্ঠা হয় তখন কিন্তু অবকাঠামোগত কোনোকিছু ছিল না। পিকেএসএফ ১৯৯১ সালে ইএসডিও-কে প্রথমে পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থায়ন করে। শুরুতে এই মাত্র পঞ্চাশ হাজার টাকা ঋণ হিসেবে বিতরণ করা আমাদের কাছে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলো। কীভাবে বিতরণ করলে টাকা ঠিকঠাক আদায় করতে পারবো সে বুঝতে পারছিলাম না আমরা। পিকেএসএফ’র একজন কর্মকর্তা ঠাকুরগাঁও এসে চার দিন অবস্থান করে উক্ত টাকা বিতরণ করতে আমাদের সহায়তা করেন। ইএসডিও সবসময় পিকেএসএফ’র কাছে চিরকৃতজ্ঞ। আমরা পিকেএসএফ-কে সব সময় আপন ভেবে হৃদয়ে লালন করি। আমাদের প্রধান লক্ষ্য দু’টি, যার মধ্যে প্রথমটি হলো মানব দারিদ্র্য হ্রাস করা এবং দ্বিতীয়টি হলো আয় দারিদ্র্য হ্রাস করা। এই লক্ষ্যে ভিত্তিতে আমরা আমাদের লক্ষ্যভুক্ত জনগোষ্ঠীর জীবনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে পেরেছি। এসব বিষয়ে অনেক স্টাডিও আছে। আমি একটু আগে শিশু শ্রমের কথা বলছিলাম, সে বিষয়ে আইএলও-এর স্টাডিতে ইতিবাচক পরিবর্তনের তথ্য পাওয়া গেছে। সরকারের বিভিন্ন প্রতিবেদনেও এই এলাকার দারিদ্র্য পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তনের তথা পাওয়া যায়।
পিকেএসএফ পরিক্রমা: ইএসডিও’র উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কার্যক্রম সম্পর্কে বলুন।
ড. মুহম্মদ শহীদ-উজ-জামান: ইএসডিও প্রধানত মাইক্রোফাইন্যান্স কর্মসূচি নিয়ে কাজ করছে। আমাদের ‘কৌশলগত পরিকল্পনা ২০৩০’ অনুযায়ী আমরা এসডিজির গোলকে এলাইন করে কাজ করছি। আমরা এসডিজির ১৫টি লক্ষ্যের সাথে কাজ করে যাচ্ছি। দারিদ্র্য বিমোচন, লাইভলিহুড উন্নয়ন, যুব উন্নয়ন, শিক্ষা, ওয়াশ-স্যানিটেশন, ক্লাইমেট অ্যাকশন, হিউম্যান রাইটস, গভর্ণেন্স, অধিবাসী উন্নয়ন, পুষ্টি, কৃষি ইত্যাদি ক্ষেত্রে ইএসডিও’র পৃথক এবং বিস্তৃত কাজ রয়েছে।
পিকেএসএফ পরিক্রমা: নারীর ক্ষমতায়নে ইএসডিও’র বিশেষ কোনো কার্যক্রম আছে কি? থাকলে সেগুলো সম্পর্কে বলুন।
ড. মুহম্মদ শহীদ-উজ-জামান: নারীদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে ইএসডিও। নারী যখন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখতে পারে তখন এমনিতেই সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়ন ঘটে। হস্তশিল্পে অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, কারিগরি জ্ঞান উন্নয়নে ইএসডিও -এর পক্ষ থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। হস্তশিল্পের মধ্যে শুধু ফ্লোরম্যাট উৎপাদনের সাথেই প্রায় ৪০ হাজার নারী সম্পৃক্ত রয়েছেন। দরিদ্র নারীদের গাভি পালনের সুযোগ করে দেয়ার পাশাপাশি উৎপাদিত দুধের প্রত্যাশিত মূল্য নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করেছি আমরা। চিজ উৎপাদনে সহায়তা প্রদান তারই একটি উদাহরণমাত্র। আপনি জানেন, ঠাকুরগাঁও চিজ শিল্পের জন্য ইতোমধ্যে সারা দেশেই সুখ্যাতি অর্জন করেছে। ঠাকুরগাঁও-এর প্রায় ৯০% চিজ ফ্যাক্টরি নারী দ্বারা পরিচালিত। এসব ফ্যাক্টরিতে দুধ সরবরাহের কাজে প্রায় ৩০ হাজর নারী সম্পৃক্ত আছেন। এসব ক্ষেত্রে ইএসডিও পিকেএসএফ’র অর্থায়নে আরএমটিপি প্রকল্প এবং কেজিএফ কর্মসূচির মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করছে। চিজ উৎপাদনে সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি এর ISO সনদায়নসহ বিপণনেও সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। পিকেএসএফ’র সহযোগিতায় ৫০০ জন কিশোরীর অংশগ্রহণে ১২৬ কি.মি সাইকেল র্যালি করা হয়েছে। এই র্যালি আয়োজনের ফলে নারীর ক্ষমতায়নে সাধারণ মানুষের মনোযোগ আকর্ষিত হয়েছে। এই র্যালিতে বাল্য বিবাহ, যৌতুকের প্রথাসহ বিভিন্ন ধরনের সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে অসংখ্য বার্তা প্রচার করা হয়েছে। রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ সেদিন নারীর এই সামাজিক প্রকাশকে অভিনন্দন জানিয়েছে; যা ছিল অভূতপূর্ব। পিকেএসএফ-এর বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব মোঃ ফজলুল কাদের সে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। আমরা পরে পঞ্চগড়, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলায় এ ধরনের র্যালি আয়োজন করেছি। অন্যান্য জেলার স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এ ধরনের আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।
পিকেএসএফ পরিক্রমা: পরিবেশ রক্ষায় ইএসডিও কী ধরনের ভূমিকা রাখছে? জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ইএসডিও’র কোনো বিশেষ উদ্যোগ আছে কি?
ড. মুহম্মদ শহীদ-উজ-জামান: ইএসডিও-এর একটা শক্তিশালী উইং আছে ক্লাইমেট চেইঞ্জ বিষয়ে। ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট, বিশেষ প্লাস্টিক রিসাইকেল করার ক্ষেত্রে ইএসডিও-এর কার্যক্রম রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকা এবং কক্সবাজারে বহুদিন আমরা এ ধরনের কাজ করছি। বণ্যা এবং খরাপ্রবণ এলাকায় আমরা পিকেএসএফ-এর অর্থায়নে দুটি প্রকল্পের কাজ করেছি। সারা বাংলাদেশে আমরা প্রায় এক কোটির বেশি বৃক্ষ রোপণ করেছি। ক্লাইমেট অ্যাকশনের সাথে সম্পর্কিত আমাদের কিছু ভিন্ন ধরনের কাজ আছে। আমরা একটা লোকায়ন জাদুঘর করেছি; সেখানে বাংলাদেশের প্রায় সকল নদীর পানি সংরক্ষণ করা আছে; যা মানুষকে সচেতন করতে সহায়তা করছে। কিছু নদী আছে; যার পানি নদীতে নাই কিন্তু আমাদের জাদুঘরে আছে। ঠাকুরগাঁও-এর দুটি নদী টাঙ্গন এবং কুলিক-কে রক্ষা করার জন্য স্থানীয় যুবকদের সম্পৃক্ত করে আমাদের সামাজিক সচেতনতামূলক কার্যক্রম রয়েছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় আমাদের কিছু পলিসি অ্যাডভোকেসি কার্যক্রম আছে। দুর্যোগের আক্রান্ত মানুষকে তাৎক্ষণিক সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে একটি জরুরি তহবিল গঠন করার উদ্দেশ্যে আমরা কাজ করছি। বিভিন্ন এনজিও তাদের উদ্বৃত্ত তহবিলের মাত্র ৫% জমা করলে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করা যেতে পারে। যেকোনো দুর্যোগের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি আক্রান্ত মানুষকে সহায়তা প্রদান করা সম্ভব না হয়, তাহলে ৫০% ক্ষতি কোন দিনও পূরণ করা সম্ভব হয় না। ইএসডিও, পপি, এসকেএস এবং এনডিপি- এই চারটি এনজিও প্রতিষ্ঠান মিলে আমরা এক কোটি টাকার এ ধরনের একটি জরুরি তহবিল (Pull Fund) গঠন করার বিষয়টি পাইলটিং-এর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও আমরা কিছু আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলার বিষয়ে নানা ধরনের কাজের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছি।
পিকেএসএফ পরিক্রমা: পিকেএসএফ’র সাথে ইএসডিও’র সহযোগী সম্পর্ক কবে থেকে? এই সহযোগিতার মাধ্যমে আপনারা কী ধরনের সুবিধা পাচ্ছেন?
ড. মুহম্মদ শহীদ-উজ-জামান: ইএসডিও প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের ক্ষেত্রে পিকেএসএফ’র ভূমিকা অতুলনীয়, যেটা আমি প্রথমেই বলেছি। ইএসডিও সহ অন্যান্য সহযোগী সংস্থাগুলোকে পিকেএসএফ একটি সিস্টেম উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে সহায়তা প্রদান করেছে তা অন্যান্য, সেটা অর্থনৈতিক সিস্টেম, গভর্নেন্স সিস্টেম, একাউন্টিং সিস্টেম ইত্যাদি। প্রতিষ্ঠানকে মনিটরিং করা, ডেভেলপ করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে পিকেএসএফ’র ভূমিকা অনস্বীকার্য। প্রতিষ্ঠানের ফিনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট, গভর্নেন্স ম্যাকানিজম, জবাবদিহিতা এবং অপারেশনাল সিস্টেম এইগুলি ভাল ভাবে তৈরি করার ক্ষেত্রে পিএকএসএফ ইএসডিও-কে গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা প্রদান করেছে। পিকেএসএফ আমাদের বিকশিত করেছে, পলিসি তৈরিতে সহায়তা করেছে, কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে, নানা ধরনের অফসাইট-অনসাইট সাপোর্ট দিয়ে আমাদেরকে আজকের এই জায়গায় নিয়ে আসতে সহায়তা ভূমিকা রেখেছে। দ্বিতীয়ত ফাইনান্সিং এবং তৃতীয় হলো পিকেএসএফ’র বিভিন্ন ধরনের প্রকল্পের দ্বারা সহযোগিতা। এসব প্রজেক্টগুলোর জন্য আমরা বুঝতে পেরেছি যে, কৃষি, লাইভস্টক, হস্তশিল্প ইত্যাদি ক্ষেত্রে কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন লোকবল থাকা দরকার। প্রকল্প বাস্তবায়নের সাথে সাথে আমরা বিভিন্ন বিষয়ে এক্সপার্ট জনবল তৈরি করতে পেরেছি; যা মাঠ পর্যায়ে নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনায় সাফল্য অর্জনে ভূমিকা রাখছে।
পিকেএসএফ পরিক্রমা: সমাজের কিছু মানুষের অভিযোগ রয়েছে যে, বাংলাদেশে এনজিও গুলো ক্ষুদ্রঋণের বিপরীতে অধিক সুদ আদায় করে এবং গরিব মানুষকে ক্রমাগত ঋণের জ্বালে আবদ্ধ করে রাখে। এই অভিযোগের ব্যাপারে আপনি কি বলবেন?
ড. মুহম্মদ শহীদ-উজ-জামান: এ ব্যাপারে আমার ভিন্নমত আছে। সুদের হার এক সময় বেশি ছিল সেটা ঠিক; কিন্তু কেউ ১০ বছরের আপডেট না জেনে যদি বলে সুদের হার বেশি তাহলে সঠিক হবে না। আপডেটটি হলো একসময় ৩০% সুদ ছিল, তারপরে সাড়ে ২৭%-এ নামিয়ে আনা হয়, তারপরে ধারাবাহিকভাবে নেমে এসে এখন ইএসডিও’র সবগুলো কম্পোনেন্ট যোগ করে ১৮.৫% এ কার্যক্রম চলছে। মনে রাখতে হবে, ব্যাংকের তুলনায় আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা ব্যয় অনেক বেশী, কারণ আমরা ঋণ কার্যক্রমে নিবিড় তদারকি করে থাকি। তদারকিতে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে পারলে আগামীতে সুদের হার হয়ত আরো কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করছি।
পিকেএসএফ পরিক্রমা: আপনি তো মঙ্গা বিষয়ে পিএইচডি করেছেন। এখনকার অনেক তরুণ মঙ্গা শব্দটির সাথে পরিচিত নয়। আপনি কি একটু বুঝিয়ে বলবেন মঙ্গা জিনিসটা কি, কেন আপনি এ বিষয়ে গবেষণা করলেন এবং তারপরের ধারাবাহিকতা কেমন?
ড. মুহম্মদ শহীদ-উজ-জামান: মঙ্গাকে ইংরেজিতে বলা হতো Famine like situation, অর্থাৎ পুরোপুরি দুর্ভিক্ষ নয়, তবে দুর্ভিক্ষের মতো। এখন মঙ্গার ঠিক বাস্তব উদাহরণ দেখা যায় না, তবে ১৫-২০ বছর আগেও সেটা ছিল। বাংলা ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি শুরু করে কার্তিক মাসের শুরু দিক পর্যন্তকেই ধরা হয়। আর অন্য একটা সময় ছিল ফাল্গুন-চৈত্র। কৃষি প্রধান এলাকা হওয়ায়, ঐ সময় জমিতে ধান লাগানোর পরে ধান একটু বড় হলে কৃষিক্ষেত্রে কাজের লোকের তেমন দরকার হতো না। ব্যাপারটা তখন এমন হতো, নো ওয়ার্ক-নো মানি-নো ফুড। কৃষি শ্রমজীবী মানুষের এই খাবারের সংকটকে বলা হতো মঙ্গা। রংপুর দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়ের কিছু অংশে প্রতিবছরে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো। কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, নীলফামারী জেলায় মঙ্গার প্রভাব হতো সবচেয়ে বেশি। রংপুরের গংগাচড়া, পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ, বোদা এসব অঞ্চলে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো।
পিকেএসএফ পরিক্রমা: দেশের উত্তরাঞ্চলের মঙ্গা নিরসনে অনেকেই কৃতিত্ব দাবি করে। আপনি কি একটু নির্মোহভাবে বলবেন, আসলে কীভাবে সম্ভব হল এই মঙ্গা নিরসন করা?
ড. মুহম্মদ শহীদ-উজ-জামান: দেশের উত্তরাঞ্চলে মঙ্গা নিরসনে অনেকেই কৃতিত্ব দাবি করে। মঙ্গা পরিস্থিতি থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য সরকারের কিছু কাজ ছিল, যেমন: কাবিখা (কাজের বিনিময়ে খাদ্য), কাবিটা (কাজের বিনিময়ে টাকা) ইত্যাদি কর্মসূচি। এসব কর্মসূচি সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে তেমন ভূমিকা রাখতে পারেনি। তাছাড়া, সব মানুষকেও এই কর্মসূচিতে আনা সম্ভব হতো না। পিকেএসএফ ২০০৬ সালের দিকে PRIME প্রকল্পের মাধ্যমে মঙ্গা নিরসনে উদ্যোগ গ্রহণ করে। পিকেএসএফ-এর অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. জসিম উদ্দিন এই প্রকল্পের নেতৃত্বে ছিলেন। মঙ্গা বিষয়ে পিকেএসএফ একটি গভীর গবেষণা করে, সেখানে ইএসডিও অংশগ্রহণ করে। স্থায়ীভাবে মঙ্গা নিরসনের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজনকে সারা বছরব্যাপী আয় সৃষ্টিমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত করা হয়। PRIME প্রকল্পের মাধ্যমে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে মঙ্গা নিরসনে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। বর্তমানে উল্লিখিত এলাকাগুলো স্বাভাবিক দারিদ্র্য থাকলেও ভয়াবহ সেই মঙ্গা আর দেখতে পাওয়া যায় না।
পিকেএসএফ পরিক্রমা: ইএসডিও’র ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
ড. মুহম্মদ শহীদ-উজ-জামান: আমরা যেটা এখনও করতে পারি নাই সেটা সম্পন্ন করাই আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। ইউরোপের উন্নত বাজারে দক্ষ জনবলের চাহিদা রয়েছে। ঐসব উন্নত বাজারের চাহিদার আলোকে আমাদের দেশের ছেলেমেয়েদের দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলে জনবল রপ্তানি করার সুযোগ আছে। গত ১০ বছর ধরে আমরা এরকম দক্ষ জনবল তৈরি করার জন্য একটি উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান তৈরির কথা ভাবছি। উন্নত দেশে বাজারের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়। এর ফলে শিক্ষা জীবন সমাপ্তির আগেই তাদের চাকরি নিশ্চিত হয়ে যায়। তাদের বেতন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও বেশী হয়। আমরা ওভারসিজ বেইজ স্কিল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার বা একটি টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার কথা ভাবছি । এমন একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করা যেখান থেকে ছেলেমেয়েরা উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন জনসম্পদ হিসেবে গড়ে উঠবে এবং প্রথম ধাপেই উচ্চ বেতনে কর্মক্ষেত্রে যোগদান করবে। এবং এটা শুধু ওভারসিজ মার্কেটকে বিবেচনা করে করা। আমরা বাংলাদেশে একটি স্কিল বেইজড ইউনিভার্সিটি করতে চাই। এ লক্ষ্যে অবকাঠামো তৈরির কাজ চলছে, অন্যান্য প্রশাসনিক ও ব্যবস্থাপনাগত কার্যক্রমও চলমান রয়েছে।
পিকেএসএফ পরিক্রমা: বাংলাদেশের এনজিও সেক্টরের উন্নয়নকর্মীদের জন্য আপনার কোন পরামর্শ আছে কি?
ড. মুহম্মদ শহীদ-উজ-জামান: তরুণ কর্মকর্তাদের প্রতি পরামর্শ এটাই, অনেকেই মনে করে ক্যারিয়ার হিসেবে এটা ভালো না। কিন্তু এনজিও সেক্টরে ক্যারিয়ার যথেষ্ট ভালো, ভবিষ্যতে এটা আরো ভালো হবে। মাইক্রোফাইন্যান্স সেক্টর তো আরো সম্ভাবনাময়। যদি আমি মনে করি যে, আমি কোথাও পাচ্ছি না এজন্য আমি এটাতে একটা ট্রানজিশনাল পয়েন্ট কাজ করলাম, তাহলে এটা বোধহয় ঠিক হবে না। যারা এটাতে কাজ করবে তারা যদি এটাকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিয়ে নেয় তাহলে প্রথমত এর মাধ্যমে বিশাল দরিদ্র সাধারণ মানুষকে সাহায্য করা হবে; দ্বিতীয়ত সে যদি ভালো ভাবে কাজ করতে পারে তাকে ব্যক্তিগতভাবে অন্য যেকোনো চাকরির তুলনায় এটা আর্থিক নিরাপত্তাও দেবে। আমি ইএসডিওর কথা বলতে পারি, ইএসডিও পাঁচটা পর্যন্ত গ্র্যাচুইটি দেয়, এবং এটা সাতটা পর্যন্ত উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা পিএফ ১২.৫০% দেই।
পিকেএসএফ পরিক্রমা: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ড. মুহম্মদ শহীদ-উজ-জামান: আপনাকেও ধন্যবাদ